শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির উপায়: স্থায়ী চিকিৎসা ও পরামর্শ
শ্বেতী রোগ (Vitiligo) বিশ্বজুড়ে একটি পরিচিত চর্মরোগ, যা আনুমানিকভাবে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ০.৫% থেকে ২%
মানুষের মধ্যে দেখা যায়। অর্থাৎ, প্রতি ১০০ জনে প্রায় ১ জন এই রোগে আক্রান্ত হন। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে আক্রান্তের হার তুলনামূলক কিছুটা বেশি, কারণ এখানে ত্বকের গঠন ও জলবায়ু এ রোগের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়ায়।
বাংলাদেশেও প্রতি ১,০০০ জনে গড়ে ২–৩ জন শ্বেতী রোগে আক্রান্ত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি ১০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে দেখা যায়। এটি নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই সমানভাবে দেখা যায়, তবে দৃশ্যমান ত্বকে দাগ
তৈরি হওয়ায় মানসিকভাবে নারীরা তুলনামূলক বেশি প্রভাবিত হন। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০%–৩০% ক্ষেত্রে শ্বেতী রোগ বংশগতভাবে হয়ে থাকে।
শ্বেতী রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখলেই দেরি না করে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রফেসর ডা. মোঃ সিরাজ উদ্দিন, দেশের অন্যতম চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, শ্বেতী রোগের আধুনিক ও কার্যকর
চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
শ্বেতী বা ভিটিলিগো হলো এমন এক ধরনের চর্মরোগ, যেখানে ত্বকের রঙ তৈরির কোষ (মেলানোসাইট) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ত্বকের কিছু অংশে সাদা বা দুধের মতো দাগ দেখা যায়।
ত্বকে সাদা দাগ হঠাৎ দেখা দিলে অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েন—“এটা কি শ্বেতী?” হ্যাঁ, এটা শ্বেতী রোগ হতে পারে। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটি ছোঁয়াচে নয়, জীবনঘাতীও নয়, তবে দৃশ্যমান দাগের কারণে মানসিক অস্বস্তি তৈরি হতে
পারে। শ্বেতী রোগ হলে সাধারণতঃ
ত্বকে সাদা দাগ দেখা দেয়।
দাগ ধীরে ধীরে বড় হতে পারে।
চুল বা ভ্রু সাদা হয়ে যেতে পারে।
রোদে দাগগুলো স্পষ্ট দেখা যায়।
ব্যথা বা চুলকানি থাকে না।
বংশগত বা ইমিউন সিস্টেমের কারণে হয়।
স্ট্রেস বা রাসায়নিক পদার্থও কারণ হতে পারে।
শরীরের দুই পাশে একরকমভাবে ছড়ালে “নন-সেগমেন্টাল” বলা হয়।
এক পাশে সীমাবদ্ধ থাকলে “সেগমেন্টাল” বলা হয়।
শ্বেতী রোগ কেন হয় ?
শ্বেতী বা Vitiligo সারা বিশ্বেই দেখা যায়—এটি কোনো নির্দিষ্ট দেশ, জাতি বা আবহাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ত্বকের রঙ তৈরির কোষ (মেলানোসাইট বা রঞ্জক কোষ) নষ্ট হয়ে গেলে ত্বকের কিছু অংশে রঙ হারিয়ে যায় এবং সাদা দাগ দেখা
দেয়।
নিম্নে বিশ্বজুড়ে পাওয়া গবেষণা ও চিকিৎসা তথ্য অনুযায়ী প্রধান কারণগুলো সহজভাবে তুলে ধরা হলো:
অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া: বিশ্বব্যাপী চিকিৎসকরা মনে করেন, শ্বেতী মূলত একটি অটোইমিউন রোগ। অর্থাৎ, শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে নিজের রঞ্জক কোষকে আক্রমণ করে। ফলে সেই কোষ নষ্ট হয়ে যায় এবং ত্বকে রঙ
উৎপাদন বন্ধ হয়।
জেনেটিক বা বংশগত প্রভাব: বিশ্বজুড়ে দেখা গেছে, প্রায় ২০% থেকে ৩০% রোগীর ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস থাকে। যাদের বাবা-মা বা ভাই-বোনের শ্বেতী আছে, তাদের মধ্যে রোগটির ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি।
মানসিক চাপ ও শারীরিক স্ট্রেস:বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্যমতে, মানসিক চাপ ও উদ্বেগ শ্বেতী রোগ শুরু বা বাড়াতে পারে। স্ট্রেসের
কারণে শরীরে কর্টিসল হরমোন বেড়ে যায়, যা ইমিউন সিস্টেমকে ভারসাম্যহীন করে ফেলে।
পরিবেশগত ও রাসায়নিক কারণ: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কেমিক্যাল এক্সপোজার, যেমন রাবার, রঙ, ডিটারজেন্ট বা প্রসাধনীতে থাকা রাসায়নিক, ত্বকের কোষের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
স্নায়বিক ও হরমোনজনিত প্রভাব: শরীরের কিছু স্নায়ু ও হরমোনের ভারসাম্যহীনতা (বিশেষ করে থাইরয়েড ও অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির সমস্যা) শ্বেতী রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। স্নায়ু থেকে নির্গত কিছু রাসায়নিক পদার্থ
(নিউরোট্রান্সমিটার) মেলানোসাইট কোষের কার্যক্ষমতা ব্যাহত করতে পারে।
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও ফ্রি র্যাডিকেল: বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, শরীরে অতিরিক্ত ফ্রি র্যাডিকেল জমে গেলে তা কোষের ক্ষতি করে। এটি “অক্সিডেটিভ স্ট্রেস” নামে পরিচিত এবং শ্বেতী রোগের অন্যতম
প্রধান প্রভাবক।
বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের হার: আনুমানিক বিশ্ব জনসংখ্যার ০.৫% থেকে ২% মানুষ শ্বেতী রোগে আক্রান্ত। পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যেই সমানভাবে দেখা যায়। এটি সব ধরনের ত্বকের রঙে হতে পারে, তবে গাঢ় ত্বকে বেশি
দৃশ্যমান।
শ্বেতী রোগের প্রাথমিক লক্ষণ: ভিটিলিগো রোগ চেনার উপায়
শ্বেতী বা ভিটিলিগো রোগের প্রধান প্রাথমিক লক্ষণ হলো ত্বকে ফ্যাকাশে বা সম্পূর্ণ সাদা ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেওয়া। এটি সাধারণত হাত, মুখ ও শরীরের খোলা অংশে এবং যৌনাঙ্গের চারপাশে দেখা যায়, যা সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে বড় হতে
থাকে। অনেক সময় চুল, ভ্রু, এমনকি চোখের পাপড়িও সাদা হয়ে যেতে পারে।
শ্বেতী রোগের প্রাথমিক এবং সাধারণ লক্ষণ:
নিচে শ্বেতী রোগের প্রধান কিছু লক্ষণ সহজভাবে দেওয়া হলো:
ত্বকের সাদা দাগ: ত্বকের যেখানে রঙের উপাদান (মেলানিন) কমে যায়, সেখানে সাদা বা ফ্যাকাশে দাগ তৈরি হয়।
দাগের বৃদ্ধি: প্রথমে ছোট ছোট দাগ দেখা দিলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগুলো বড় হতে পারে এবং আশেপাশের জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।
দাগের অবস্থান: মুখ, হাত, পা, হাঁটু, কনুই, ঘাড় ও শরীরের খোলা অংশে বেশি দেখা যায়।
চুল ও চোখের পাপড়ি সাদা হওয়া: আক্রান্ত ত্বকের অংশে, যেমন - মাথার ত্বক, চোখের পাপড়ি, ভ্রু বা দাড়িতে অকাল সাদা চুল দেখা দিতে পারে।
দাগের রঙের ধরণ: কোনো অংশ পুরো সাদা হয়, আবার কোনো অংশে মাঝখান সাদা ও চারপাশ ফ্যাকাশে দেখা যায়।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
বিশেষজ্ঞ চর্মরোগ চিকিৎসক
ত্বক দেখে ও প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষা করে রোগটি নিশ্চিত করতে পারেন। মনে রাখবেন শ্বেতী ছোঁয়াচে নয় বা কারও সংস্পর্শে ছড়ায় না। এটি কুষ্ঠ রোগও নয়, তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সঠিক সময়ে চিকিৎসা ও যত্ন
নিলে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং অনেক ক্ষেত্রেই দাগ হালকা হয়ে যায়।
ত্বকে নতুন সাদা দাগ দেখা দিলে বা আগের দাগ দ্রুত ছড়ালে
চুল, ভ্রু বা চোখের পাপড়ি হঠাৎ সাদা হতে শুরু করলে পরীক্ষা করুন।
শ্বেতী রোগের চিকিৎসা ধীরে ধীরে ফল দেয়। ধৈর্য ধরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চললে দাগ কমে যেতে পারে এবং ত্বকে রঙ ফিরে আসে। নিচে ধাপে ধাপে নির্দেশনাটি টেবিল আকারে দেওয়া হলো:
ধাপ
করণীয়
ফলাফল / উদ্দেশ্য
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন
প্রফেসর ডা. মোঃ সিরাজ উদ্দিন-এর মতো অভিজ্ঞ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান
রোগের ধরন ও অবস্থার সঠিক মূল্যায়ন
ওষুধ ও মলম ব্যবহার
চিকিৎসকের পরামর্শে নির্ধারিত মলম (স্টেরয়েড, ট্যাক্রোলিমাস ইত্যাদি) ব্যবহার করুন
ত্বকের রঞ্জক কোষ সক্রিয় করা
আলোক থেরাপি (Phototherapy)
Narrowband UVB বা PUVA থেরাপি নিতে পারেন
ত্বকে ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক রঙ ফিরিয়ে আনে
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন
ফল, শাকসবজি, প্রোটিন ও পানি বেশি খান
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নতি
মানসিকভাবে দৃঢ় থাকুন
স্ট্রেস কমান, ধ্যান বা প্রার্থনা করুন
মানসিক স্থিতি বজায় থাকে, রোগের অগ্রগতি কমে
নিয়মিত ফলো-আপ করুন
নির্ধারিত সময়ে চিকিৎসক দেখান
চিকিৎসার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনে পরিবর্তন
শ্বেতী রোগের চিকিৎসা ও পরামর্শ
নিচে শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তি বা উন্নতির উপায় ও পন্থাসমূহ আলোচনা করা হলো, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন চিকিৎসা শুরু করা ঠিক হবে না।
১. ঔষধ ও চিকিৎসা পন্থা (আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি)
শ্বেতী রোগের চিকিৎসা এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। এটি নির্ভর করে দাগের পরিমাণ, অবস্থান, এবং রোগ কতদিন ধরে আছে তার ওপর। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে অনেক ক্ষেত্রেই ত্বকের রঙ ধীরে ধীরে আগের
অবস্থায় ফিরে আসে। নিচে সংক্ষেপে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:
টপিকাল ক্যালসিনিউরিন ইনহিবিটরস (যেমন ট্যাক্রোলিমাস, পাইমেক্রোলিমাস): ইমিউন সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক।
ফটোথেরাপি / আলোক থেরাপি: সাধারণত Narrow-band UVB (NBUVB) পন্থা ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি তুলনামূলক নিরাপদ এবং কার্যকর বলা হয়।
PUVA থেরাপি: Psoralen + UVA পদ্ধতি (কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়)।
সার্জারি পন্থা (যদি দাগ স্থির থাকে ও চিকিৎসায় সাড়া না দেয়):
স্কিন গ্রাফটিং (epidermal grafting)
মেলানোসাইট ট্রান্সপ্লান্টেশন
মিনি গ্রাফ্ট পদ্ধতি ইত্যাদি
বিকল্প ও নতুন ওষুধ: JAK inhibitors ধরনের ওষুধ (যেমন রাক্সোলিটিনিব ক্রিম) উন্নয়ন-পর্যায়ে আছে এবং কিছু দেশে অনুমোদিত হয়েছে।
২. ধবল রোগের প্রাকৃতিক ঔষধ (আয়ুর্বেদিক পন্থা)
প্রাকৃতিক বা ফিটোচিকিৎসা পন্থা অনেকেই অনুসরণ করেন। কিছু উদাহরণ:
বকুচি (Psoralea corylifolia): বীজ বা তেল রূপে ব্যবহৃত হয়, সূর্যালোকের সঙ্গে প্রয়োগ করলে পিগমেন্ট ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করতে পারে।
হলুদ (Curcuma longa): কারকিউমিনের কারণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভূমিকা থাকতে পারে।
আদা ও লাল পাটিলার মিশ্রণ: প্রচলিতভাবে দাগে লাগিয়ে কিছু রোগী ফল লক্ষ্য করেছেন।
থালা মধু + পেঁয়াজ + ওটস (Avena sativa): কিছু পরীক্ষামূলক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে মুখের শ্বেতীতে সফলতা পাওয়া গেছে।
Ginkgo biloba: এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ সম্ভাব্যভাবে সহায়ক।
দ্রষ্টব্য: প্রাকৃতিক পন্থাগুলি সব সময় নির্বিরোধ নয়, অনেক ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সীমিত। কিছু উদ্ভিদ ও উপাদান অপ্রত্যাশিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই
চিকিৎসক বা ত্বক বিশেষজ্ঞের অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা উচিত।
শ্বেতী রোগের স্থায়ী চিকিৎসা কি আছে?
বর্তমানে একেবারে “স্থায়ী চিকিৎসা” বলা যায় এমন কোনো চিকিৎসা নেই, তবে অনেকেই চিকিৎসার মাধ্যমে একে বেশ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। তাই শ্বেতী হলে অবশ্যই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে চিকিৎসা শুরু করা
জরুরি। অনেক রোগীর ত্বকে রঙ ফিরে আসে এবং দাগগুলো প্রায় মিলিয়ে যায়। এটা নির্ভর করে –
দাগের অবস্থান
কতদিন ধরে হয়েছে
শরীরের প্রতিক্রিয়া কেমন
শ্বেতী রোগের খাবার নির্দেশিকা: ভিটিলিগো রোগ থাকলে কি খাবেন এবং কি খাবেন না
শ্বেতী রোগ পুরোপুরি খাদ্যনির্ভর নয়, তবে সঠিক খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বকের রঞ্জক কোষ (মেলানোসাইট) পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, কিছু খাবার রোগের অগ্রগতি বাড়াতে বা কোষের ভারসাম্য
নষ্ট করতে পারে। তাই কী খাবেন আর কী এড়াবেন, এই সচেতনতাই শ্বেতী নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখে।
শ্বেতী রোগ থাকলে কি খাবেন?
তাজা ফল ও শাকসবজি (গাজর, পেঁপে, ডালিম, পালং)
মাছ, ডিম, ডাল, ছোলা
দুধ, দই, বাদাম, চিয়া সিড
পর্যাপ্ত পানি ও ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল
তিল, ফ্ল্যাক্স সিড, ওমেগা-৩ খাবার
শ্বেতী রোগ থাকলে খাওয়া যাবে না
অতিরিক্ত টক ফল (লেবু, তেঁতুল, আনারস)
ভাজা ও মশলাদার খাবার
প্রক্রিয়াজাত ফাস্টফুড ও কোমল পানীয়
অতিরিক্ত চিনি ও লবণ
দুধজাত খাবার বেশি পরিমাণে
ভিটিলিগো রোগ প্রতিরোধের টিপস
প্রতিদিন রঙিন ফল-সবজি খান
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
মানসিক চাপ ও ধূমপান-মদ্যপান থেকে দূরে থাকুন
প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন নিন
শ্বেতী রোগে ত্বকের যত্ন ও জীবনধারার গুরুত্ব
শ্বেতী রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুধু ওষুধ নয়, দৈনন্দিন যত্ন ও জীবনধারার পরিবর্তনও খুব জরুরি। সুস্থ অভ্যাস শরীরের ভেতর থেকে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং ত্বকের কোষকে পুনরুজ্জীবিত করে। রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু অভ্যাস
অনুসরণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়:
প্রাকৃতিক যত্ন
প্রতিদিন ত্বক পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন।
রোদে বের হলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
অ্যালোভেরা জেল বা নারকেল তেল লাগাতে পারেন ত্বক নরম রাখতে।
বকুচি বা হলুদের মতো ভেষজ উপাদান চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করুন।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-সমৃদ্ধ খাবার (গাজর, পেঁপে, ডালিম, শাকসবজি) নিয়মিত খান।
জীবনধারা
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিন।
প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম বা হাঁটা অভ্যাস করুন।
মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান বা শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন।
ধূমপান, মদ্যপান ও ফাস্টফুড থেকে দূরে থাকুন।
সূর্যের আলোতে অতিরিক্ত সময় না থাকুন।
নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ ও ফলো-আপ করুন।
মানসিকভাবে দৃঢ় থাকুন
শ্বেতী রোগে অনেকেই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন, কিন্তু এটা ভুল। এই রোগে ব্যথা নেই, জীবন ঝুঁকিও নেই, শুধু বাহ্যিক পরিবর্তন। নিজেকে ভালোবাসুন, নিয়ম মেনে চলুন, আর চিকিৎসকের পাশে থাকুন।
নিজের ত্বক নিয়ে লজ্জা বা হীনমন্যতা বোধ করবেন না।
পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলুন।
ধ্যান, নামাজ বা প্রার্থনা মনকে শান্ত রাখে, নিয়মিত চর্চা করুন।
সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকুন, নিজেকে আলাদা ভাববেন না।
আয়নায় নিজের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টি রাখুন, “আমি সুন্দর, আমি যথেষ্ট।”
প্রয়োজনে কাউন্সেলর বা সাপোর্ট গ্রুপের সহায়তা নিন।
বাংলাদেশে এখন শ্বেতী রোগের আধুনিক চিকিৎসা সহজলভ্য। প্রফেসর ডা. মোঃ সিরাজ উদ্দিন, দেশের অন্যতম অভিজ্ঞ চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ, দীর্ঘদিন ধরে শ্বেতীসহ নানা ত্বকের রোগের চিকিৎসা
করে আসছেন। তিনি রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করেন, যেখানে ওষুধ, আলোক থেরাপি ও জীবনধারাগত পরিবর্তনের সমন্বয় থাকে।
আপনি যদি শ্বেতী রোগে ভুগে থাকেন বা নতুন দাগ লক্ষ্য করেন, দেরি না করে আজই কল করুন ০১৭১৩৩২৮৫৪৬ এবং প্রফেসর ডা. সিরাজ উদ্দিনের পরামর্শ নিন। বিশেষজ্ঞের পরামর্শই
হতে পারে আপনার সুস্থ ত্বক ও আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার প্রথম ধাপ।
শ্বেতী রোগের ওষুধ নির্ভর করে দাগের পরিমাণ ও অবস্থার ওপর। সাধারণত চিকিৎসক স্টেরয়েড মলম, ট্যাক্রোলিমাস (Tacrolimus), পাইমেক্রোলিমাস (Pimecrolimus) ইত্যাদি দেন। অনেক ক্ষেত্রে ফটোথেরাপি (UVB আলো চিকিৎসা)
ব্যবহার করা হয়।
শ্বেতী রোগ কি বংশগত/জেনেটিক?
হ্যাঁ, অনেক সময় শ্বেতী রোগ বংশগত হতে পারে। পরিবারের কারও এ রোগ থাকলে পরবর্তী প্রজন্মে ঝুঁকি কিছুটা বেশি থাকে। তবে সবাই আক্রান্ত হয় না; মানসিক চাপ ও পরিবেশগত কারণও ভূমিকা রাখে।
ভিটিলিগো নিরাময় হয় না কেন?
শ্বেতী বা ভিটিলিগো নিরাময় করা কঠিন কারণ এটি শরীরের ইমিউন সিস্টেমের সমস্যা থেকে হয়। শরীর নিজেই রঞ্জক কোষকে আক্রমণ করে, ফলে স্থায়ীভাবে কোষ পুনরুদ্ধার সম্ভব হয় না। তবে চিকিৎসায় দাগ নিয়ন্ত্রণে রাখা
যায়।
শ্বেতী রোগের প্রাথমিক লক্ষণ কী কী?
ত্বকে ছোট সাদা দাগ দেখা দেয়।
দাগ ধীরে ধীরে বড় হয় বা ছড়ায়।
আক্রান্ত স্থানের চুল বা ভ্রু সাদা হতে পারে।
রোদে দাগ স্পষ্ট দেখা যায়।
লিপস্টিক খেলে কি শ্বেতী রোগ হয়?
না, লিপস্টিক বা প্রসাধনী খাওয়া বা ব্যবহার করার কারণে শ্বেতী রোগ হয় না। তবে নিম্নমানের প্রসাধনীতে থাকা রাসায়নিক ত্বকে অ্যালার্জি বা জ্বালাভাব সৃষ্টি করতে পারে।
কোন রোগে ত্বক সাদা হয়?
ত্বক সাদা বা ফ্যাকাশে হওয়ার প্রধান কারণ হলো শ্বেতী রোগ (Vitiligo)। এছাড়াও অ্যালবিনিজম, ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা কিছু হরমোনজনিত সমস্যা থেকেও ত্বক হালকা হতে পারে।
যে মেয়ের মায়ের শ্বেতী আছে তাকে কি বিয়ে করা যায়?
অবশ্যই যায়। শ্বেতী ছোঁয়াচে নয় বা প্রাণঘাতীও নয়। এটি কেবল ত্বকের রঙের পরিবর্তন। পরিবারে ইতিহাস থাকলে পরবর্তী প্রজন্মে ঝুঁকি সামান্য বাড়তে পারে, তবে এটি কোনো বিয়ে বা সম্পর্কের বাধা নয়।
ভিটিলিগো ভবিষ্যৎ চিকিৎসা?
বিশ্বজুড়ে গবেষণা চলছে। এখন JAK inhibitors জাতীয় ওষুধ ও স্টেম সেল থেরাপি নিয়ে নতুন আশা জেগেছে। ভবিষ্যতে শ্বেতী রোগের আরও উন্নত ও স্থায়ী চিকিৎসা পাওয়া যেতে পারে।
হলুদ খেলে কি ভিটিলিগো রোগ হয়?
না, হলুদ খাওয়া শ্বেতী রোগের কারণ নয়। বরং এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক উপাদান রয়েছে যা ত্বকের জন্য উপকারী।
মধু কি শ্বেত রোগে সাহায্য করে?
মধু ত্বক পুষ্ট রাখে এবং কোষ পুনর্গঠনে সহায়তা করে। যদিও এটি শ্বেতীর সরাসরি চিকিৎসা নয়, তবে প্রাকৃতিক স্কিন কেয়ারে এটি উপকারী উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।